১৯২৪ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত যোগানন্দজি ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেন এবং আমেরিকার অনেক বিশাল প্রেক্ষাগৃহ যেমন নিউইয়র্কের কার্নেগী হল থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ফিলহারমোনিক হলে দর্শকপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে তিনি বক্তৃতা দেন। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস একটি অনুবেদনে বলে “ফিলহারমোনিক প্রেক্ষাগৃহে এক আশ্চর্য দৃশ্য দেখা গেল, ৩০০০ আসনের প্রেক্ষাগৃহটি একটি বিজ্ঞাপিত বক্তৃতা শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগেই কানায় কানায় ভরে গেছে।”
যোগানন্দজি বিশ্বের মহান ধর্মমতগুলির অন্তর্নিহিত ঐক্যের বিষয়ে জোর দেন এবং সরাসরি ব্যক্তিগত ঈশ্বরানুভূতি লাভের জন্য সারা বিশ্বে প্রযোজ্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে শিক্ষা দেন। এর মধ্যে যারা তাঁর শিক্ষা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে চায় তাদের তিনি আত্ম-উপলব্ধির ক্রিয়াযোগ শিক্ষা দিয়েছিলেন, পাশ্চাত্যে তাঁর ৩০ বছরব্যাপী বসবাসকালে তিনি ১,০০,০০০ এরও বেশি নরনারীকে দীক্ষা দেন।
তাঁর শিষ্যদের মধ্যে বিজ্ঞান, ব্যবসা, এবং কলা বিভাগের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাদের মধ্যে উদ্যানতত্ত্ববিদ লুথার বারব্যাঙ্ক, অপেরা গায়িকা আমেলিতা গাল্লি-কুর্চি, জর্জ ইস্টম্যান (কোডাক ক্যামেরা আবিষ্কারক), কবি এডউইন মার্কহ্যাম এবং অর্কেস্ট্রা নির্দেশক লিওপোল্ড স্টকোস্কি অন্যতম। ১৯২৭-এ আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রপতি কালভিন কুলিজ তাঁকে আমন্ত্রণ জানান, যিনি খবরের কাগজে তাঁর কাজকর্মের বিষয়ে পড়ে উৎসাহী হয়েছিলেন।
১৯২৯-এ তাঁর দু মাসের মেক্সিকো ভ্রমণে, তিনি ল্যাটিন আমেরিকায় তাঁর কাজের ভবিষ্যত বিকাশের বীজ বপন করেন। মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি, ডক্টর এমিলিও পোর্টেস জিল সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান যিনি যোগানন্দজির শিক্ষার আজীবন গুণগ্রাহী ছিলেন।
১৯৩০-এর মাঝামাঝির মধ্যে, পরমহংসজির সঙ্গে তাঁর প্রথমদিকের বেশ কিছু শিষ্যদের সাক্ষাৎ হয় যারা পরে তাঁকে সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ প্রতিষ্ঠার কাজে এবং তাঁর জীবৎকালের পরেও ক্রিয়াযোগ প্রচারের কাজে সাহায্য করেছিলেন। এর মধ্যে সেই দুজনও ছিলেন যাদের তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী রূপে সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপের প্রধান অধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁরা হলেন রাজর্ষি জনকানন্দ (জেমস জে . লিন), ১৯৩২-এ কানসাস সিটিতে তাঁর গুরুদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং শ্রী দয়ামাতা যিনি তার আগের বছর সল্টলেক সিটিতে গুরুদেবের ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে যে শিষ্যরা তাঁর বক্তৃতার অনুষ্ঠান শুনেছিলেন এবং এগিয়ে এসে এসআরএফের কাজে তাঁদের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তাঁরা হলেন, ডঃ এবং শ্রীমতী এম. ডাবলু. লুইস, যিনি ১৯২০ তে বোস্টনে তাঁকে সাক্ষাৎ করেছিলেন; জ্ঞানমাতা (সিয়াটল, ১৯২৪); তারা মাতা ( সানফ্রানসিসকো, ১৯২৪); দুর্গা মাতা (ডেট্রয়েট, ১৯২৯); আনন্দ মাতা (সল্টলেক সিটি, ১৯৩১) শ্রদ্ধা মাতা (ট্যাকোমা, ১৯৩৩) এবং শৈলসূতা মাতা (স্যান্টা বারবারা, ১৯৩৩)।
এরপর যোগানন্দজি দেহ রাখার অনেক বছর পর এমনকি আজ পর্যন্ত সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ, যারা পরমহংস যোগানন্দজির ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন তাঁদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে।
শিষ্যদের প্রতি যোগানন্দজির প্রথমদিকের শুধু কিছু ক্লাসের রেকর্ডিং করা হয়েছিল। যখন দয়ামাতা (যিনি পরে তাঁর বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েছিলেন) ১৯৩১-এ তাঁর আশ্রমে যোগ দেন l তারপর থেকে তিনি যোগানন্দজির শয়ে শয়ে বক্তৃতা, ক্লাস এবং ঘরোয়া আলাপচারিতা সব কিছু বিশ্বস্তভাবে রেকর্ড করার পবিত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেন যাতে তাঁর জ্ঞান এবং অনুপ্রেরণা তার আসল শক্তি এবং শুদ্ধতার সঙ্গে সংরক্ষিত করা যায় এবং সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ দ্বারা আগামী প্রজন্মের জন্য প্রকাশ করা যায়।