পরমহংস যোগানন্দজির কালজয়ী আধ্যাত্মিক গ্রন্থের একটি বিস্তারিত বর্ণনা
২০২১-২২ এ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কালজয়ী আধ্যাত্মিক গ্রন্থ পরমহংস যোগানন্দজির আত্মচরিত অটোবায়োগ্রাফি অফ এ য়োগি ৭৫ তম বর্ষ উদযাপন করেছে।
পরমহংস যোগানন্দের জীবনচরিতের উদ্দেশ্যে নিবেদিত পৃষ্ঠাতে আপনাকে স্বাগত। এই বইটি সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় এবং মনকে নাড়া দিয়েছে। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে এই বইটি অসংখ্য পাঠককে ভারতবর্ষের প্রাচীন যোগ বিজ্ঞান এবং ঈশ্বর লাভের বিজ্ঞানসম্মত উপায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে যা বিশ্ব মানবসভ্যতার প্রতি ভারতবর্ষের দীর্ঘমেয়াদি অনন্য এক অবদান।
১৯৪৬-এ, প্রথম প্রকাশের পর থেকেই মাস্টারপিস বলে পরিগণিত এই আত্মকথা সবসময় আধ্যাত্মিক বেস্টসেলার তালিকায় স্থান পেয়ে আসছে এবং বিভিন্ন পথের আধ্যাত্মিক অন্বেষণকারী দ্বারা পঠিত হয়েছে। ১৯৯৯-তে এই বইটিকে “শতাব্দীর সেরা ১০০ টি আধ্যাত্মিক বই” এর অন্যতম বলে সম্মান প্রদান করা হয়েছে।
পাঠকমহলের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কারণে এই বইটি ভারতের ১৫টি প্রধান আঞ্চলিক ভাষায় এবং সারা বিশ্বের ৫০টির বেশি ভাষায় অনূদিত এবং প্রকাশিত হয়েছে।
হার্ডবাউন্ড, পেপারব্যাক, অডিও এবং ইবুক মাধ্যমে উপলব্ধ
ই বুক ডাউনলোড করুন
এই ই-বুকটি শিল্প মান অনুযায়ী ইপাব মাধ্যমে উপলব্ধ এবং একটি পাঠোপযোগী অ্যাপ আছে এমন যে কোনো যন্ত্রের মাধ্যমে এটি পড়া যাবে।
ইংরেজি অডিওবুক সিডি কিনুন
‘গান্ধী’ চলচ্চিত্রের জন্য অ্যাকাডেমী পুরস্কার বিজেতা স্যর বেন কিংসলের দ্বারা পঠিত
বই এর প্রিভিউ
সবচেয়ে মনোগ্রাহী রচনাংশ
একটি ছাত্র পরমহংসজির কাছে জানতে চেয়েছিল: “মহাশয়, সাধারণ মানুষের জন্য যোগী- কথামৃতর কোন অংশটি সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক?” গুরুদেব কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন তারপর বললেন: “আমার গুরু যুক্তেশ্বরজির এই কথাগুলি: ‘অতীতকে ভুলে যাও। যতদিন না মানুষ ঈশ্বর অবলম্বন করছে ততদিন মানুষের ব্যবহার সর্বদা ভরসার অযোগ্য। ভবিষ্যতে সব কিছুরই উন্নতি হবে যদি তুমি এখন থেকে একটি আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টা শুরু কর।”
এক অনন্য লেখক, অনন্য বই এবং একটি অনন্য বার্তা
“আমাদের সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা হল চেতনা ও পদার্থের মধ্যে সম্পর্কের বিজ্ঞানসম্মত ধারণার ক্রমশ উত্থান ।...ডাক্তাররা এবং তাঁদের রোগীরাও এখন বুঝতে শুরু করেছেন যে আমাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল অনেকাংশে আমাদের মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে।...দেহ, মন এবং আত্মার পারস্পরিক সম্পর্ককে উদঘাটন করে, এমন গবেষণাগুলি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং ‘কিভাবে জীবনযাপন করা উচিত’ এই নীতির অপরিসীম মূল্যকে প্রকাশ করেছে যা বহু বছর আগে পরমহংস যোগানন্দ শিখিয়েছিলেন।”
“আমি এই বইটি ভালোবাসি। যারা নিজেদের চিন্তাভাবনা ও মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস রাখে তাদের এটি অবশ্যই পড়তে হবে। এই বইয়ে জ্ঞানের যে ধারণা এবং তার প্রয়োগ বিবৃত আছে, তা আপনার সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনকে পরিবর্তন করে দেবে। ঈশ্বরে বিশ্বাস করুন এবং ভালো কাজ করতে থাকুন। #একভালবাসা #কৃতজ্ঞথাকা #একেঅপরকেসাহায্যকরা।”
“(পরমহংস যোগানন্দের ) যোগী-কথামৃত অনেক বছর ধরে একটি অসাধারণ বেস্ট সেলার। তাঁর সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ কেন্দ্রগুলি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে আন্তরিকভাবে অন্বেষণকারী ভক্তদের প্রিয় আশ্রয়স্থল। তিনি [সেল্ফ-রিয়লাইজেশন ফেলোশিপ সদর দফতরে ] ১৯৫০-এ লস অ্যাঞ্জেলসের বৃহত্তর অঞ্চলে আমার উপর যে প্রভাব ফেলেছিলেন...আমার মনে আছে...তার মধ্যে এমন এক ধরনের শান্তি ছিল, যা এই পৃথিবীর নয় এবং এমন একটি শান্তি যা আমরা আমাদের দৈনন্দিন অনুসন্ধানে সাধারণত খুঁজি না। তাঁর জনপ্রিয়তার কারণ ছিল স্পষ্ট।...তাঁর সাফল্য কেবলমাত্র চাকচিক্য ছিল না। তাঁর কাছে একটি গোপন রহস্য ছিল, সেই গোপন রহস্য হল ক্রিয়া যোগ (সর্বজনীন ক্রিয়া যোগ )।”
“একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় আধুনিক হিন্দু সাধুদের অসাধারণ জীবন এবং শক্তির স্মৃতিচারণ, এই বইটির তাৎপর্য একই সঙ্গে সময়োপযোগী ও কালজয়ী।...এই অসামান্য জীবন দলিলটি অবশ্যই পাশ্চাত্যে প্রকাশিত হওয়া একটি অন্যতম রচনা যেখানে ভারতের আধ্যাত্মিক সম্পদের বিষয়ে এতটা উদ্ঘাটিত করা হয়েছে”
“একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় অথচ সহজ এবং আত্ম-উন্মোচনকারী জীবনকাহিনী...একটি প্রকৃত শিক্ষার ভান্ডার। এই পৃষ্ঠাগুলিতে যেসব মহান ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হওয়া যায়...তাঁরা স্মৃতির পাতায় এমন একজন বন্ধুর মতো ফিরে আসেন, যিনি আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞায় পূর্ণ, এবং এইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলেন ঈশ্বর প্রেমে নিমজ্জিত লেখক নিজে।”
“(যোগানন্দজির) সমাদৃত আত্মকথা যোগী কথামৃতে, তিনি দিব্য চৈতন্যের এক অভূতপূর্ব বিবরণ দিয়েছেন উচ্চতর যোগ অভ্যাস এবং যোগীর এবং বৈদান্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানব চরিত্রের বিভিন্ন আকর্ষণীয় দিক তুলে ধরেছেন।”
অন্তরঙ্গ শিষ্যদের কথায়
পরমহংসজির জীবনীগ্রন্থ অটোবায়োগ্রাফি অফ এ য়োগী লেখার প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে অনেক বছর লেগেছিল। আমি যখন ১৯৩১-এ মাউন্ট ওয়াশিংটনে এসেছিলাম, তখন তিনি ইতিমধ্যেই এটি নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। একবার, যখন আমি তাঁর অধ্যয়ন কক্ষে তাঁর জন্য কিছু সেক্রেটারিয়াল দায়িত্ব পালন করছিলাম, তখন আমি তাঁর লেখা প্রথম অধ্যায়গুলির মধ্যে একটি দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম তা ছিল “দ্য টাইগার স্বামী”। গুরুদেব আমাকে এটি সংরক্ষণ করতে বলেছিলেন কারণ এটি একটি বইতে যাবে।
যে জীবন তিনি ভারতের বহু সাধু সন্তদের মধ্যে কাটিয়েছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে কাটানো মুল্যবান সময়ে তিনি মাঝেমাঝেই সেই কথা বলে আমাদের মুগ্ধ করতেন। আমরা যখন শেষ পর্যন্ত তাঁর জীবনের সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বর্ণনা গ্রন্থ দেখলাম, তখন আনন্দে আমাদের মুখ থেকে শুধু “ওহ” এবং “আহ” শব্দগুলি বেরিয়ে আসছিল। তিনি কয়েকটি পৃষ্ঠা খুলে দেখালেন শেষটি বাবাজি র ছবির জন্যে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। প্রায় শ্বাসরুদ্ধ করে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা জানালাম এবং আমাদের পরম-পরমগুরুর চেহারার প্রথম ঝলক দেখবার সুযোগ পেয়ে তাঁর অসীম কৃপা অনুভব করলাম।
গুরুদেব সেই বইয়ের বেশিরভাগ লেখালেখি আশ্রমে তাঁর অধ্যয়ন কক্ষেই করেছেন। আমার মনে আছে কখনও কখনও এমনও হয়েছে তিনি সারারাত জুড়ে বা কখনও কখনও সারাদিন বা তারও বেশি সময় ধরে বলে যেতেন। আমি দয়া মা বা আনন্দ মায়ের মত সেক্রেটারিয়াল দায়িত্বে জড়িত ছিলাম না, যারা কখনও তাঁর কথাগুলো শর্টহ্যান্ডে লিখে রাখতেন এবং কখনও কখনও টাইপরাইটার ব্যবহার করতেন। আমার দায়িত্ব ছিল মূলত তাদের খাবার রান্না করা যাতে তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারেন।
বিশ্বের ৫০টির বেশি ভাষায় অনূদিত
যোগী-কথামৃত রচনার কাহিনী
অনেকদিন আগেই এই বই লেখার কাজটির ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। আধুনিক যুগে যোগের নবজাগরণের অন্যতম জনক উনবিংশ শতাব্দীর পরম শ্রদ্ধেয় গুরু শ্রীশ্রী লাহিড়ী মহাশয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেনঃ “পাশ্চাত্যে যোগ বিষয়ে গভীর আগ্রহ তৈরি হওয়ার কারণে আমার দেহ রাখার প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে, আমার একটি জীবনকাহিনী লেখা হবে। যোগের বার্তা সারা পৃথিবীকে বেষ্টন করবে। এটি মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগ্রত করতে সাহায্য করবে: একই পিতা, মানবজাতির এই প্রত্যক্ষ উপলব্ধির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে এক ঐক্যবোধ।”
অনেক বছর পরে, লাহিড়ী মহাশয়ের উন্নত শিষ্য স্বামী শ্রী শ্রীযুক্তেশ্বরজি তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণী শ্রীশ্রী যোগানন্দজির কাছে ব্যক্ত করেন।
একটি সুদৃঢ় আশ্বাস
বইটির শেষ অধ্যায়ে, পরমহংস যোগানন্দজি লিখছেন:
“ ঈশ্বরই প্রেম; তাঁর সৃষ্টির পরিকল্পনা নিশ্চিতভাবে প্রেমের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। পাণ্ডিত্যপূর্ণ যুক্তির থেকে এই সরল ভাবনাটি কি মানবহৃদয়ে শান্তির প্রলেপ এনে দেয় না? প্রত্যেকটি সাধু যারা সত্যের মূল অবধি পৌঁছতে পেরেছেন তাঁরা সাক্ষী আছেন, এক দিব্য পরিকল্পনা অবশ্যই আছে এবং তা সুন্দর এবং আনন্দে পরিপূর্ণ।”
আমাদের আশা এই যে আপনারাও ভারতবর্ষের সাধু সন্তদের সর্বোৎকৃষ্ট সত্যের প্রতি আপনাদের নিজেদের আত্মার গভীর বিশ্বাসের উৎস খুঁজে পাবেন।