ভারতের সর্বপ্রিয় যোগশাস্ত্র গীতা, যোগের জ্ঞান রূপকার্থে ব্যক্ত করেছে সেকথা পরমহংস যোগানন্দ তাঁর ভগবৎ গীতার সুনির্দিষ্ট তর্জমা ও ভাষ্য গড টকস উইথ অর্জুন : দ্য ভগবৎ গীতায় উদ্ঘাটিত করেছেন।
গীতার অন্তর্নিহিত যোগের বার্তা সম্পূর্ণ উপলব্ধি করে ঋষি পতঞ্জলি সরল ও সুসম্বন্ধভাবে রাজ (“royal”) যোগ মার্গের সারাংশ সংক্ষিপ্ত অথচ সুনিপুণভাবে তাঁর যোগসূত্রে লিপিবদ্ধ করেছেন।
পরমহংস যোগানন্দ বলেছেন, পতঞ্জলি “ধারাবাহিক সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যায় ঈশ্বর-উপলব্ধির সীমাহীন ও জটিল জ্ঞানের সংক্ষিপ্ত সারাংশের ধারাবাহিকতায় সুন্দর, স্পষ্ট ও অর্থবহভাবে অব্যক্ত পরমাত্মার সাথে নিজের সংযুক্ত হবার পদ্ধতি উপহার দিয়েছেন —প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জ্ঞানীগণ যোগসূত্রকে সর্বাগ্রগণ্য প্রাচীন ভাষ্য বলে স্বীকার করেন।”
অষ্টাঙ্গ মার্গ নামে পরিচিত এই পতঞ্জলি যোগ-পদ্ধতি ঈশ্বর-উপলব্ধির পরম লক্ষ্যের পথপ্রদর্শন করে।
যোগের অষ্টাঙ্গ মার্গ:
- যম (অবাঞ্ছনীয় আচার-আচরণের থেকে বিরত থাকার নৈতিক নিয়ম): অন্যকে আহত করা, অসততা, চুরি, ব্যাভিচার (অনিয়ন্ত্রিত যৌন আবেগ) ও লালসা
- নিয়ম (আধ্যাত্মিক গুণ ও ব্যবহারের বিকাশ): শরীর ও মনের পবিত্রতা, সবরকম পরিস্থিতিতে সন্তোষ, আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাধ্যায় (অনুশীলন) আর ঈশ্বর ও গুরুভক্তি
- আসন: সঠিক দেহভঙ্গি
- প্রাণায়াম: শরীরের সূক্ষ্ম জীবনীশক্তি, প্রাণের নিয়ন্ত্রণ
- প্রত্যাহার: বাহ্যিক বস্তুজগতের থেকে ইন্দ্রিয়জ শক্তির প্রত্যাহারে চেতনার অন্তৰ্মুখীকরণ
- ধারণা: একাগ্রতা; কোনো একটি বিষয়ে বা বস্তুতে চিন্তা
- ধ্যান: ধ্যান, ঈশ্বরের অসীম রূপের একটিতে — আনন্দ, শান্তি, মহাজাগতিক জ্যোতি, মহাজাগতিক ধ্বনি, প্রেম, প্রজ্ঞা ইত্যাদিতে নিমগ্নতা — সমগ্র মহাবিশ্বে পরিব্যাপ্ত
- সমাধি: পরমাত্মা ও জীবাত্মার মিলনের অতিমানস অভিজ্ঞতা
রাজযোগের বৈজ্ঞানিক ধ্যান পদ্ধতির সঠিক প্রক্রিয়ার সাথে প্রাণায়ামের সর্বোত্তম অভ্যাসের (অষ্টাঙ্গ মার্গের চতুর্থ ধাপ, জীবনীশক্তির নিয়ন্ত্রণ) প্রাথমিক উদ্দেশ্য চেতনার অন্তৰ্মুখীকরণ (প্রত্যাহার) ও পরম উদ্দেশ্য পরমাত্মার সাথে একত্ব (সমাধি)।
জীবনীশক্তি সাধারণত স্নায়ুতন্ত্র ও চেতনায় ক্রমাগত বহির্মুখে প্রবাহিত হয় তাই আমাদের পারিপার্শ্বিক পৃথিবীকে উপলব্ধি করি। প্রাণায়ামের প্রক্রিয়ার সাহায্যে ওই একই জীবনীশক্তি (প্রাণ) অন্তর্মুখী হয়ে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের উচ্চতর আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলিতে প্রবাহিত হওয়াতে অন্তঃস্থিত অপরিমেয় জগতের উপলব্ধি করতে পারি।
যোগদা সৎসঙ্গ পাঠমালাতে ওয়াইএসএস-এর শেখানো ধ্যানের প্রক্রিয়া, বিশেষ করে ক্রিয়াযোগ প্রক্রিয়াই রাজযোগের সর্বোত্তম প্রাণায়াম প্রক্রিয়া। পরমহংস যোগানন্দ প্রায়ই তাকে আত্মাকে পরমাত্মার আনন্দের সাথে পুনর্মিলিত হবার দ্রুততম পথ বলতেন।
প্রাণায়াম অভ্যাসের দ্বারা আমরা সরাসরি উপায়ে চিত্তবিক্ষিপ্ততা থেকে মনোযোগ মুক্ত করি — শারীরিক শক্তির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যা অন্যথায় আমাদের চেতনাকে বহির্মুখি করে। নিজের সত্বাই যে পরমাত্মার সাথে অভিন্ন নিত্যমুক্ত অমর আত্মা জানার বাধাদানকারি অশান্ত চিন্তা ও অদম্য আবেগকে এইভাবে নিশ্চল করি।